
জোনিংয়ের মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে: সালেহ আহমেদ
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেছেন, আমাদের ভূমি কম। ভূমি জোনিংয়ের মাধ্যমে দেশের ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ভূমি মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে প্রস্তাবিত ‘ভূমি জোনিং ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব।
সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত ব্যবহারের পরিকল্পনা করা, যেমন— আবাসিক এলাকার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা এবং পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব কমানো। এতে কৃষি জমি সুরক্ষিত হবে, ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি ভূমি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ভূমির জোনভিত্তিক পরিকল্পিত ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাই কাম্য।
সভায় জানানো হয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে অপরিকল্পিত নগরায়ন, আবাসন, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, শিল্পকারখানা স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রাকৃতিক কারণে প্রতিনিয়তই ভূমির প্রকৃতি ও শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে। দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট ভূমির ৫৯.৭ শতাংশ কৃষিজমি, ১৭.৪ শতাংশ বনভূমি এবং ২০ শতাংশ জলাভূমি। এ বাস্তবতায় ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ‘ভূমি জোনিং ও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ অপরিহার্য।
কোনো রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কর্তৃক এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করে অননুমোদিতভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বা কোনো হাউজিং সোসাইটির কৃষিজমিতে অননুমোদিতভাবে হাউজিং এস্টেট তৈরি করা হলে বা হাউজিং এস্টেট তৈরির উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ কৃষিজমি দখল করে রাখা হলে বা কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, কোম্পানি, শিল্প মালিক, রিসোর্ট, ব্যবসায়ী, ব্যাংক, বিমা কোম্পানি, পুঁজিপতি, কোনো এনজিও বা কোনো ক্লাব কৃষিকাজ ব্যতীত বাণিজ্যিক বা বিনোদন অন্য কোনো উদ্দেশ্যে অননুমোদিতভাবে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণের বেশি কৃষিজমি দখল করে রাখলে, এ–রূপ ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সোসাইটি, এনজিও, ক্লাব বা কোম্পানির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের জেল ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯–এর ৫৯ ধারা অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট কর্তৃক বিচার হবে। আইনটি শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. শরিফুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (জরিপ ও সায়রাত অনুবিভাগ) সায়মা ইউনুস, অতিরিক্ত সচিব (আইন অনুবিভাগ) মো. আব্দুর রউফ, এনডিসি, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) মো. এমদাদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমানসহ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।
পরে রাজধানীর কাটাবনে ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নবনিযুক্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি)–দের ‘৪৩ ও ৪৪তম বেসিক ভূমি ব্যবস্থাপনা কোর্সের’ সমাপনী ও সনদ বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সচিব।
তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় পূর্বের নিয়মতান্ত্রিকতা থেকে বেড়িয়ে আধুনিক ও ডিজিটাল ধারায় প্রবেশ করেছে। ভূমি সেবা একটি পবিত্র দায়িত্ব। কর্মে সততা, দক্ষতা ও আন্তরিকতা থাকতে হবে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। সবাইকে মিলেই এই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এখানের সবাই ডিসি হবেন না, সবাই সচিব হবেন না। মনে রাখবেন, আপনি হবেন। এখন থেকেই সে অনুযায়ী পেশাদারিত্ব ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। অহংকার থাকবে না। ভদ্রতা দিয়ে মানুষকে সন্তুষ্ট করতে হবে। সর্বোপরি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখতে হবে। জুলাই-আগস্টের চেতনা ধারণ করে দেশ গড়ব।
আলোচনা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) এ জে এম সালাউদ্দিন নাগরী, ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদ হাসান, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এবং কোর্স পরিচালক রুমানা রহমান শম্পা।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?