
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দরজা আরও প্রশস্ত করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
নিজ্বস প্রতিনিধি
বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মালয়েশিয়ার দরজা খোলা রাখার পাশাপাশি তা আরও প্রশস্ত করতে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক, পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই ও তিনটি নোট আদান–প্রদানের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অতীতে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের শ্রমিকদের আন্তরিকভাবে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছে বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই দরজা খোলা থাকবে এবং আরও প্রশস্ত হবে, যাতে আরও বেশি তরুণ এখানে এসে কাজ করতে ও অনেক কিছু শিখতে পারেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে অনেক কিছু শিখে দেশে ফিরে নিজ ব্যবসা শুরু করেন, নিজের অর্থনৈতিক কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যান। এজন্য আমরা মালয়েশিয়ার কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার সম্পর্ক দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, বিশেষত যেসব বাংলাদেশি শ্রমিক এখানে কাজ করছেন তাঁদের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা তাঁদের আয় দেশে পাঠান, যা তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের জীবনে স্থায়িত্ব এনে দেয়, সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে সহায়তা করে এবং ভালো শিক্ষা নিশ্চিত করে।’
‘এরা বহিরাগত কর্মী নয়—তাঁদের কাজ করতে দেওয়া উচিত। তারা এখানে কাজ করতে পেরে খুবই খুশি,’ যোগ করেন তিনি।
প্রফেসর ইউনূস আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য মালয়েশিয়ান উদ্যোক্তাদের বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমরা মালয়েশিয়া থেকে বিনিয়োগ চাই। আমাদের আছে মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি, যা আমরা অফার করতে পারি। মালয়েশিয়া চাইলে বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করে সারা বিশ্বে বিক্রি করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এটাই আমরা চাই—বাংলাদেশে আর্থিক ও বিনিয়োগ–সংক্রান্ত সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হোক, যাতে আমাদের অর্থনীতি টেকসই ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছায়।’
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ার সঙ্গে সাংস্কৃতিক ও বহুপাক্ষিক ইস্যুতেও একযোগে কাজ করার ব্যাপারে কথা হয়েছে; ‘মালয়েশিয়ার জনগণের সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।’
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে শৃঙ্খলা ও অর্থনীতি পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছে; প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করেছে। এখন আমরা নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তুত।’
তিনি জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যাতে নতুন সরকার গঠিত হয় এবং দেশ স্বাভাবিক পথে চলে। ‘এক্ষেত্রে আমরা মালয়েশিয়ার সহযোগিতায় সর্বদা ভরসা রাখি,’ যোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম প্রফেসর ইউনূসের অবদানকে প্রশংসা করে বলেন, ‘তিনি শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অসাধারণ অগ্রগতি রেখেছেন এবং এখন বিনিয়োগ, বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও শিক্ষা খাতে আমাদের সম্পর্ক আরও জোরদার করছেন।’
তিনি আরও জানান, দুই মন্ত্রী—স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ—মাল্টিপল–এন্ট্রি ভিসা সুবিধায় একমত হয়েছেন, যাতে শ্রমিকরা পরিবারের কাছে যেতে ও কাজে নিরাপত্তায় থাকতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) যে প্রস্তাব দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, বিশেষত শ্রমিকদের জন্য যারা আটকা পড়েছেন।’
ইতিমধ্যে, গত বছরের অক্টোবরে তাঁর প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে বাংলাদেশের শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছিল বলে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?