
যাদুকাটা বালুমহাল বন্ধ, তিন উপজেলার ৩০ হাজার শ্রমিকের মানবেতর জীবন যাপন
মোঃ এমরান হোসেন, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ বালুমহাল যাদুকাটা বালুমহাল মামলা জনিত কারণে ইজারা কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় গত ০৫ মাস ধরে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সরকারের শত কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের বালুমহালটির ইজারা কার্যক্রম স্থগিত থাকায় বালু উত্তোলন, লোড, আনলোড, নৌ শ্রমিক, মালিক ও ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শ্রমজীবী মানুষ দ্রুত মহালটির ইজারা কার্যক্রম চালু করে দাবি জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনাধীন জেলার বৃহৎ বালুমহাল তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদী ইজারা দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বালুমহালটির ইজারা নিয়ে ইজারাদাররা নিয়ম বহির্ভূতভাবে নদীর তীর কেটে, অবৈধ ড্রেজার এবং শেইভ মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলন করে নদী ও নদী তীরবর্তী এলাকার ব্যাপক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়েছেন উল্লেখ করে নদীটির ব্যবস্থাপনা এবং নদীটির নিয়ন্ত্রণ ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে খারিজ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ন্যাস্ত করার দাবি জানিয়ে গত ১৪৩১ বাংলা সনের শেষ সময়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাসিন্দা খোরশেদ আলম। তার দায়ের করা পিটিশনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত প্রথমে বালুমহালটির ইজারা কার্যক্রমের উপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। এরপর ১৪৩২ বাংলা সনে মহালটির ইজারাপ্রাপ্তরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আপিল করলে, আদালত ৬ মাসের স্থগিতাদেশের বদলে, পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে ভূমি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর থেকে অদ্যবধি বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়ায় মহালটিতে গত ৪ মাস ধরে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ফলে তিন উপজেলার প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক ও কয়েক হাজার ব্যবসায়ী কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপনকরছেন।বালিু উত্তোলনকারী আক্কাস মিয়া বলেন, মহালটিতে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে গত ৪ মাস ধরে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছি।বালু শ্রমিক জসিম মিয়া বলেন, যাদুকাটা নদীতে কাজ বন্ধ হওয়ার পর কাজের খোঁজে সিলেটের ভোলাগঞ্জে গিয়ে সেখান থেকে ফিরে এসেছি। এমন করে চলতে থাকলে না খেয়ে মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না আমাদের। আমরা বালু মহালটি দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি জানাই।বাদাঘাট বাজারের বালু পাথর ব্যাবসায়ী কামাল মিয়া বলেন, গত ৪ মাস ধরে মহালটি বন্ধ থাকায় প্রচুর লোকসানের মুখে পড়েছি। দেশের নানা অঞ্চলে বালু সরবরাহ করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা বাকি পড়েছে। আরও বালু সরবরাহ করতে না পারায় ওই টাকা উত্তোলন করতেপারছিনা।জানাগেছে, শুধু এই তিন উপজেলার শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরাই নন, এই বালু মহালটি বন্ধ থাকায়, রাজধানী ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের নানা অঞ্চলের শ্রমিক ও বালু ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলার মামলাজনিত একাধিক বালুমহাল খুলে দেয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
Comment / Reply From
You May Also Like
Latest News
Vote / Poll
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা বন্ধ করতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন কি?